বাংলার কথা ডেস্ক :
তেমন পরিচিত নয়, এমন কিছু উদ্ভিদ আর অপ্রচলিত কিছু খাদ্যপণ্যের তালিকা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা, ২০৫০ সালে এসবই থাকবে সারাবিশ্বের মানুষের খাদ্য তালিকায়। বিবিসির পরিবেশবিষয়ক সংবাদদাতা হেলেন ব্রিগস এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন লিখেছেন।
এমনও ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, যখন আমরা সকালের নাশতা সারব হয়তো নকল কলা (এনসেট) কিংবা পান্ডানুস গাছের ফল দিয়ে। কয়েকটি ফসলের ওপর বিশ্বের নির্ভরশীলতা যে কী বিপদের, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ সেই দিকটি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
মাত্র ১৫টি খাদ্যপণ্য থেকেই ৯০ শতাংশ ক্যালোরি আসে। লন্ডনের রয়েল বোটানিক গার্ডেনসের বিশেষজ্ঞরা তাই মানুষের ভবিষ্যৎ খাদ্যভ্যাসের জন্য নতুন উপাদন খুঁজে বের করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্যাভাবের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ফসল নষ্ট হয় এবং বিশ্বজুড়ে প্রধান পণ্যের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
গবেষক ড. স্যাম পিরিনন বলেছেন, ক্ষুধা দূর, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার অন্যতম উপায় হলো আমাদের নিয়মিত খ্যাদ্যভ্যাসের বৈচিত্র্য বাড়ানো। তার ভাষায়, ‘আমরা জানি বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে- যা খেয়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বেঁচে থাকে। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় এসব উদ্ভিদ থেকে আমরা সমাধান খুঁজে বের করতে পারি। সারা পৃথিবীতে সাত হাজারেরও বেশি ভোজ্য উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৪১৭টি ব্যাপকভাবে ফলন দেয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
পান্ডানুস
প্যান্ডানুস (পান্ডানুস টেক্টোরিয়াস) একটি ছোট প্রজাতির গাছ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন এবং উপকূলীয় এলাকায় জন্মে। পান্ডানুসের পাতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে মিষ্টি এবং সুস্বাদু খাবারে ব্যবহার করা হয়। এর ফল দেখতে অনেকটা আনারসের মতো, যা কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। গবেষক ড. মেরিবেল সোটো গমেজ জানিয়েছেন, পান্ডানুস গাছ খরা, প্রবল বাতাস এবং লবণাক্ততা ইত্যাদি যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
গমেজ বলেন, ‘এটি জলবায়ু সহনশীল। পুষ্টিকর খাদ্য। সঙ্গে সুস্বাদুও। এটি আমাদের খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনতে পারে। সারাবিশ্বে বিরূপ পরিবেশেও উৎপাদন করাও সম্ভব।’
মটরশুঁটি
আমাদের ভবিষ্যতের খাদ্যপণ্যের তালিকায় থাকতে পারে মটরশুঁটি বা শিম। এগুলো সস্তা, উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ খাবার। সমুদ্রের তীর থেকে পাহাড়ের ঢালেও এই খাবার উৎপাদন করা যায়। বিশ্বে ২০ হাজার প্রজাতির শিম রয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র কয়েকটা ব্যবহার করি। শত শত বন্য শিম রয়েছে, এখনো যা বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা।
মোরামা বিন (টাইলোসেমা এস্কুলেন্টাম) বতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু অংশে একটি প্রধান খাদ্য, যেখানে মটরশুঁটি ভুট্টা বা মাটির সঙ্গে পাউডারে সিদ্ধ করা হয়, যাতে পোরিজ বা কোকোর মতো পানীয় তৈরি করা হয়। সবগুলোই ভোজ্য নয়, তবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য গবেষণা করছেন যে, কোনটি খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
ভক্ষ্যশস্য
১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে সিরিয়াল বা ভক্ষ্যশস্যের। এই খাদ্যের ব্যাপক বৈচিত্র্য। ভবিষ্যৎ খাদ্যসংকট দূর করতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই খাদ্যটির।
ফোনিও নামক প্রাচীন আফ্রিকান শস্যদানা বাদামের মতো স্বাদের জন্য জনপ্রিয়, বিশেষত মালির বামবারা জনগোষ্ঠীর খুব প্রিয় খাবার এটি। পাঁচ হাজার বছর আগে এটি মিসরে চাষ করা হতো। মরুতে জন্মায় এ উদ্ভিদ, সাদা ও কালো দুই ধরনের ফোনিও পাওয়া যায়। স্বাদে কিছুটা এশিয়ার শস্যদানা কাউনের মতো। এতে প্রচুর আয়রন, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম আছে।
নকল কলা
এনসেট বা নকল কলা ইথিওপিয়ার খাবার। জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে একটি নতুন সুপার ফুড এবং জীবন রক্ষাকারী খাদ্য হতে পারে।
গবেষণা বলছে, কলার মতো ফসলের উষ্ণায়ন বিশ্বের ১০ কোটির বেশি মানুষকে খাওয়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। উদ্ভিদটি ইথিওপিয়ার বাইরে প্রায় অচেনা। এটি রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকাতে অনেক বড় পরিসরে ফসলটির উৎপাদন সম্ভব।
বাংলার কথ /২৩ মে/২০২২
Leave a Reply