নিউজ ডেস্ক :
শেরপুরে সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। জেলা সদরসহ ৫ উপজেলায় সরিষার আবাদ হলেও সবচেয়ে বেশী ও বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন জেলার নকলা উপজেলার কৃষকরা। জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশী সরিষার আবাদ হলেও সদর ও নকলা উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে হলুদে ছেয়ে গেছে। ওইসব এলাকার চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ মাঠে দু’চোখ যতদুর যায় ততদুর হলুদ আর হলুদ এবং সরিষা ফুলের ম ম গন্ধে ভরে গেছে গ্রামের পর গ্রাম।
আগাম জাতের আমন ধান উৎপাদন এবং যেসব জমিতে পানি জমে থাকার কারণে সময় মতো আমনের চারা রোপন করা যায়নি সেসব জমিতে সরিষার আবাদ হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশী। বিশেষ করে জেলা সদর এবং নকলা উপজেলার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে সরিষার আবাদ বেশ ভালো হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন নদীর চরাঞ্চলে সরিষার আবাদ সবচেয়ে বেশী হচ্ছে। আমনের পর কয়েক মাসের জন্য পড়ে থাকা জমিতে এ সরিষা আবাদে বাড়তি আয় পেয়ে খুশি স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, গত তিন বছরের মধ্যে এবার সরিষার আবাদ অনেক বেশী হয়েছে। দিন দিন জেলায় সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও ঝুকছে সরিষা আবাদে। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সরিষা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিলো ৭ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে, অর্জিত হয় ৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অর্জিত হয় ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ওই বছর দেশে করোনা কালীন নানা সমস্যা এবং চরাঞ্চলে বন্যা ও বৃষ্টির পানি দেরিতে নেমে যাওয়ায় অনেকেই আবাদই করতে পারেনি। এরপর চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে এবং ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে গত দুই বছরের চেয়ে বেশী ৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, একর প্রতি সরিষা আবাদে খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এবার জমি তৈরী করতে ট্রাক্টরের হালচাষে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ বেশী পড়েছে। কৃষকরা আশা করছে প্রতি একরে সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মণ। মৌসুমের সময় দাম কিছুটা কম থাকলেও প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে মজুদ করে রেখে বছরের শেষে বিক্রি করলে প্রায় দ্বিগুন দামে বিক্রি করা যায় বলে জানায় কৃষকরা। এছাড়া সরিষা আবাদ উঠে গেলে ওই জমিতে সরিষা গাছের আগাছা মাটিতে পড়ে প্রচুর জৈব সার তৈরী হয়। ফলে পরবর্তী বোরো আবাদে সারের পরিমান অনেক কম লাগে। সরিষার খড়ও জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কৃষকরা।
সদর উপজেলার টাঙ্গার পাড়া গ্রামের আক্রম হোসেন বাবুল জানায়, আমরা আমন আবাদের পর কয়েক মাস পরে থাকা জমিতে এই সরিষার আবাদ করে বাড়তি আয় করি। এবার সোয়া একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এ সরিষা উঠিয়ে বোরোর আবাদ করতে অর্থনৈতিক সুবিধা পাবো।
জেলার নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা গ্রামের সরিষা চাষি আলহাজ্ব মাহবুবর রহমান জানায়, সরিষা আবাদ খুবই লাভ জনক বিধায় এবারও আমি ৩ একর জমিতে চাষ করেছি। আশা করছি এবারও বাম্পার ফলন হবে। সেক্ষেত্রে আমি দ্বিগুন লাভের আশা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মুহিত কুমার জানায়, আমরা এবার সরিষার বেশ ভালো ফলনের আশা করছি। আবহাওয়াও অনুকুলে রয়েছে। এতে বাম্পার ফলন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকার প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রান্তিক চাষিদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করেছে। এবার জেলায় মোট ৬ হাজার কৃষককে এক বিঘা করে মোট ৬ হাজার বিঘা জমির জন্য বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।