নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা (রাজশাহী) o
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের তরুণ বিদ্রোহী প্রার্থী আদালতের মাধ্যমে তার প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভোটের চিত্র। এই মুহূর্তে ভোটারদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমানা প্রাচীর ‘রেললাইন’।
এখানে দলীয়ভাবে বড় রাজনৈতিক দু’টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে দু’জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যথাক্রমে শহীদুজ্জামান শহীদ ও তোজাম্মেল হকের বাড়ি রেল লাইনের উত্তরে। সেখানে ভোটার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। অপরদিকে আওয়ামী লীগ থেকে যে দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বাড়ি রেললাইনের দক্ষিণে। এখানে ভোটার সংখ্যা উত্তরের চেয়ে ডাবল।
ফলে বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই দাবি করেছেন, বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর মধ্যে একজন মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে তারা দলমত নির্বিশেষে উত্তরের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। সরেজমিন রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) আড়ানী বাজার এবং রেলস্টেশন সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বললে তাদের এমন মনোভাব উঠে আসে।
আড়ানী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এখানে বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীর উপর দিয়ে যে রেললাইন স্থাপন হয়েছে, তার উত্তরে রয়েছে তিনটি ভোট কেন্দ্র। অপরদিকে দক্ষিণ পাশে রয়েছে সাতটি কেন্দ্র। তবে লাইনের এপার-ওপারের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটা দূরত্ব রয়েছে।
তারা বলেন, গত নির্বাচনে যখন রেললাইনের উত্তর এবং দক্ষিণ থেকে দু’জন মেয়র পদে ভোট করেন, তখন দক্ষিণের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী রেললাইনের উত্তর দিক থেকে সে সময়ের বিএনপি দলীয় প্রার্থী তোজাম্মেল হকের এলাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার ভোটের মধ্যে মাত্র ২৭৫টি ভোট পেয়েছিলেন। আর এ বিষয়টি এবারের নির্বাচনে অনেকের কাছে ভোটের ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কেউ কেউ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দক্ষিণের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে যে কোন একজনকে ভোট করার আহবান জানাচ্ছেন। আবার অনেকেই বলছেন, বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর চলমান উন্নয়নে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। এদিক থেকে মুক্তার যদি তরুণ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও বিগত সময়ের মেয়র প্রার্থী বাবলু হোসেনের ছেলে রিবন আহাম্মেদ বাপ্পীকে সমর্থন দেয়, তাহলে ভোটের চিত্র বদলে যাবে এবং তিনি বিজয়ী হবেন।
তবে আড়ানী পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলী বলেন, ‘গত নির্বাচনে আজকের দলীয় প্রার্থী তার নিজ এলাকা রেললাইনের উত্তর থেকে আমাকে তিনশ; ভোট দিতে পারেননি। তাহলে এবার তাকে কেন দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলো, এটাই আমার প্রশ্ন?’
তিনি বলেন, আমি লোকমুখে শুনতে পাচ্ছি শহীদুজ্জামান শহীদ নির্বাচিত হলে নাকি পৌরসভার নতুন ভবন রেললাইনের উত্তরে নির্মাণ করবেন। আমি এ কথাটি জনগণকে বলছি। প্রয়োজনে বিদ্রোহী দু’জনের মধ্যে যে কোন একজন বসে যাবো। তবুও রেললাইনের উত্তর থেকে মেয়র নির্বাচিত হতে দেবো না।
আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এবারের দলীয় প্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ দাবি করে বলেন, ‘মেয়র মুক্তার আলীর এ কথা সত্য নয়। পৃথিবীতে হরেক রকম মানুষ আছে। কে কী বললো, সিটি বড় কথা নয়। আমার কাছে সবাই সমান। আমি রেললাইনের দক্ষিণকে আলাদা করে ভাবি না। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বাবুল হোসেন আকষ্মিকভাবে মারা যাওয়ার পর মুক্তারকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্ত রেললাইনের উত্তর প্রান্তের মানুষ প্রার্থী পছন্দ না করায় মুক্তারকে সবাই ভোট দেয়নি। ’
বাংলার কথা/নুরুজ্জামান/ডিসেম্বর ২৭, ২০২০