মঙ্গলবার , ১৮ অক্টোবর ২০২২ | ৭ই চৈত্র, ১৪২৯
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খুলনা বিভাগ
  4. খেলাধুলা
  5. চট্টগ্রাম বিভাগ
  6. জাতীয়
  7. ঢাকা বিভাগ
  8. প্রচ্ছদ
  9. ফিচার
  10. বরিশাল বিভাগ
  11. বিনোদন
  12. মতামত
  13. ময়মনসিংহ বিভাগ
  14. রংপুর বিভাগ
  15. রাজনীতি

বাগমারায় চাল আত্মসাৎ করা সেই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই, উল্টো চাল বরাদ্দ

প্রতিবেদক
BanglarKotha-বাংলারকথা
অক্টোবর ১৮, ২০২২ ২:০৩ অপরাহ্ণ

শামীম রেজা, বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
সাত বছর ধরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৪ সুবিধাভোগীর চাল আত্মসাৎ করা সেই পরিবেশক নিত্যানন্দ মণ্ডলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাঁকে চাল উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এনিয়ে সুবিধাবঞ্চিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তবে ইউএনও বলেছেন, ওটা পুরানো ঘটনা। এসব তদন্ত করা সম্ভব নয়।

ওই পরিবেশক প্রায় ১৪ সুবিধাভোগীদের বরাদ্দ সাত বছর ধরে আত্মসাৎ করা ছাড়াও নিজের ও স্ত্রীর নামে কার্ড করে চাল উত্তোলন করেছেন। তাঁরা দুই জনেই স্কুল শিক্ষক।

কমিটির উপজেলার সভাপতি বাগমারার ইউএনও সাইদা খানম অভিযুক্ত পরিবেশকে চাল দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, যে সময়ে অনিয়ম হয়েছে, ওই চেয়ারম্যান এখন দায়িত্বে নেই। তাই পুরানো অভিযোগ আমলে নিলে তদন্ত করা সম্ভব নয়। স্বচ্ছল ও চাকরিজীবী হওয়ার পরেও কীভাবে পরিবেশক নিজের ও স্ত্রীর নাম সুবিধাভোগীদের তালিকাভূক্ত করে সুবিধা নিয়েছেন এমন প্রমাণ থাকার পরেও কেন ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এই বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি। ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন অভিযোগ দেওয়ার প্রমান সাংবাদিকদের দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে তদন্ত না করেই পরিবেশকে দুর্নীতিতে উৎসাহিত করা হলো।

কমিটির উপজেলার সদস্যসচিব ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালাহ উদ্দীন এর আগে বলেছিলেন, তিনি যে অপরাধ করেছেন তাতে তাঁর ডিলারশিপ বাতিল হওয়াসহ আত্মসাৎ করা চাল ফেরত দিতে হবে। এই উপজেলায় এরকম শাস্তির নজিরও রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার তিনি সুর পাল্টে বলেন, ইউএনওর সুপারিশে ডিও দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মসূচির চাল বিক্রির জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা চালগুলো বিক্রি করবেন। এই কর্মসূচির আওতায় দুঃস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের পর তাদের নামে কার্ড ইসু্যু করা হয়। ওই কার্ডের মাধ্যমে বছরের পাঁচ মাস ১০টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন উপজেলা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া ডিলারদের কাছ থেকে।

এদিকে, গত আগস্ট মাস থেকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিজিটাল ডাটাবেজ’ প্রস্তুত শুরু করে খাদ্য বিভাগ। তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সুবিধাভোগিদের ছবিসহ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের তথ্য সংগ্রহের সময় কাচারী কোয়ালীপাড়ার আট নম্বর ওয়ার্ডের ১৪জন ব্যক্তি জানতে পেরেছেন তাঁরা ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভূক্ত। তাঁদের নামে বরাদ্দ চাল সাত বছর ধরে পরিবেশ উত্তোলন করে আসছেন। বিষয়টি তাঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান এবং প্রতিকার চান। তাঁরা অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের নিয়োগ পাওয়া পরিবেশক নিত্যানন্দ মÐল চালগুলো তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের অনিক কুমার, আজাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, ইভা রানী ও সুষমা রাণী জানান, তাঁরা যে কর্মসূচির সুবিধাভোগী তা জানতেন না। কোনো দিন চালও কেনেননি ডিলারের কাছ থেকে। তাঁদের কোনো কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। অথচ তাঁদের নাম তালিকাভূক্ত করে রীতিমত চাল আত্মœসাৎ করেছেন ডিলার। এটা যেমন লজ্জার তেমনি কষ্টের বলে মন্তব্য করেন। মিনতি রাণী বলেন, তিনি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও ডিলারের কাছে ধর্ণা দিয়েও তালিকাভূক্ত হতে পারেনি। অথচ নতুন ভাবে আবেদন করতে গিয়ে জানতে পেরেছেন তিনি সাত বছর ধরে এই সুবিধাভোগী। তিনি এজন্য ডিলারকে দায়ী করে তাঁর বিচারের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আরও দুইটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কর্মসূচির সভাপতির কাছে।

নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকার ১৮৩ নম্বরে নাম থাকা কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্য মিঠুন কুমার বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে চাকরির সুবাদে এলাকার বাইরে আছেন। তিনি বা পরিবারের কোনো সদস্য কখনো চাল কিনেন না। তবে ডিলার তাঁর আতœীয়। তিনি এই অনিয়ম করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তাঁর নামও তালিকায় দেখে অবাক হয়েছেন। তাঁর নামে সাত বছর ধরে চাল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত ডিলারের আওতায় থাকা ৪৫০জনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যাপক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ধনী ব্যক্তিদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ডিলার নিত্যানন্দ মÐল নিজের ও স্ত্রী সন্ধ্যা রাণীর নাম সুবিধাভোগীর তালিকাভূক্ত করেছেন। অথচ তাঁরা দুইজনেই চাকরিজীবী। দুইজনই পেশায় স্কুলশিক্ষক। ডিলার হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার সময় ও পরবর্তী পর্যায়ে (২০২০ পর্যন্ত) তিনি কাচারী কোয়ালী পাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪০ জন সুবিধাভোগীর নাম তালিকাভূক্ত করে চাল নামের বরাদ্দ চাল আত্মসাতের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের ১২জনের বিষয় স্থানীয় ও প্রতারিতরা নিশ্চিত করেছেন। এর বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।

অভিযুক্ত পরিবেশক (ডিলার) নিত্যানন্দ মÐল তিন জনের নামে বরাদ্দ চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ স্বীকার করে বলেছিলেন বলে, ‘এজন্য আমি একা নয়, তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানও দায়ী। তাঁর প্ররোচনায় তিনজনের নামের গড়মিল করা হয়েছে।’ তবে স্বামী-স্ত্রীর নাম সুবিধাভোগীদের তালিকায় থাকা বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি অক্টোবর মাসের চাল দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করেছেন বলে স্বীকার করেন।
তৎকালীন চেয়ারম্যান আয়েন উদ্দিন পরিবেশকের অভিযোগ ও অনিয়ম প্রসঙ্গে মুঠোফোনে বলেছেন, ডিলার অনিয়ম করে তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। তিনি এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন।

সর্বশেষ - প্রচ্ছদ