নিউজ ডেস্ক :
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ঘটানো হয় জেল হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ওই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর জাতির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায়।
বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে জাদুঘর আয়োজিত ‘৩ নভেম্বরের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কে এম খালিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেওয়া হয়েছিল, যেন পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়। এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মতো জাতীয় চার নেতা হত্যার পেছনেও জিয়াউর রহমান জড়িত। তার সুচারু পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতার মধ্যে কেবল সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। রাজনীতিবিদদের অনেকেই অর্থবিত্তের পেছনে ছোটাছুটি করেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিলেন জাতীয় চার নেতা। তারা সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ পুনর্গঠনে তাদের অবদানের কথা জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলাম তনয়া ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজে বের করার জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করা দরকার।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, জাতীয় চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে স্বীকার করে তারা এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা যারা স্বাধীনতার সুফলভোগী, আমাদের সবারই দেশ ও জাতির প্রতি কিছু নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর তা হলো- গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে সত্যের প্রতি অবিচল থাকা এবং ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানা ও তা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। আর যেসব মূল্যবোধকে ধারণ করে এদেশ স্বাধীন হয়েছে সেগুলোকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করা।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জাতীয় চার নেতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শের প্রতি অবিচল ও অটুট ছিলেন। বাংলাদেশ ও পৃথিবীর ইতিহাসে যাতে এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আর না ঘটতে পারে, সেজন্য এর নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন প্রয়োজন।