বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি o
উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ব্র্যাক মোড়ের মেসার্স ভবানীগঞ্জ ফিলিং ষ্টেশনের মালিক নাটোরের উত্তর বরগাছি এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করে প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ মতে, প্রতারক মিন্টু বাগমারার শিকদারী বাজার পরে ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় পেট্রোলের ব্যবসা চালু করে সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসায়ের পার্টনার করার প্রলোভন দিয়ে তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে ভুয়া পার্টনার করার কাগজ ধরিয়ে দেন। পরে তারা ওই কাগজ মূলে ব্যবসায়ের লভ্যাংশ চাইতে গিয়ে জানতে পারেন কাগজটি ভুয়া। পেট্রোল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিন্টু তাদের সাথে প্রতারনা করেছেন । এভাবে মিন্টু একাধিক ব্যক্তির কাছে প্রতারনা পূর্বক অর্থ আত্মসাত করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই তিনি আবার ছিনতাই সহ চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে এসব মামলা মিথ্যা প্রমানিত হয়ে খারিজ হয়ে যায়। এভাবে প্রতারক মিন্টুর প্রতারনা শিকার হয়ে উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের দক্ষিন মাঝগ্রামের জালাল উদ্দিন ব্যবসার তহবিল সহ জমিজমা ও ভিটামাটি হারিয়ে এখন পথের কাঙ্গাল হয়ে পড়েছেন।
ভুক্তভোগি জালাল উদ্দিন প্রতারক মিন্টুর খপ্পরে পড়ে শুধু জমিজমা হারাননি। মোটা অংকের টাকা ও জমিজমা হারিয়ে তিনি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনার প্রতিকার ও ক্ষতিপূরন চেয়ে আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে মিন্টুর কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন জালাল উদ্দিন।
ভুক্তভোগি জালাল উদ্দিন সহ এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, নাটোরের উত্তর বরগাছি এলাকার পেট্রোল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিন্টু তেল ব্যবসার আড়ালে এলাকার একাধিক ব্যক্তির কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাগমারায় শিকদারী বাজারে তিনি বিগত প্রায় ৮/৯ বছর আগে রোকেয়া ফিলিং ষ্টেশন নামে ভাড়ায় একটি পোট্রোলের ব্যবসা চালু করেন। রোকেয়া ফিলিং ষ্টেশনের মালিক ছিলেন ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সোবহান চৌধুরী। ওই ব্যবসায় পিন্টু তিনি সহ আরো দুইজনকে পার্টনার করে নেন। সেখানে মিন্টু তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সোবহান চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে পেট্রোল পাম্পটিতে চোরাই ও ভেজাল তেলের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় পাম্পটিতে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বিষয়টি হাতে নাতে ধরা পড়ায় দুইদফা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমান আদালত। পরে এনিয়ে পাম্প মালিক সোবহান চৌধুরী ও পার্টনাররা আপত্তি তুললে কৌশলী মিন্টু ২০১২ সালের ৭ মার্চ দুপুরের দিকে রোকেয়া ফিলিং ষ্টেশনে একটি ছিনতাই নাটক সাজিয়ে ৫ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। পরে অপর দুই পার্টনারের পাওয়া টাকা মিন্টু আর ফেরত না দিয়ে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে দাবিয়ে রাখেন।
পরে ২০১৪ সালের দিকে ভবানীগঞ্জে পৌরসভায় ভবানীগঞ্জ ফিলিং ষ্টেশন নামে আরো একটি ফিলিং ষ্টেশন ভাড়া নেন মিজানুর রহমান মিন্টু। এই পাম্পটিও স্থানীয় সদস্য ইঞ্জি এনামুল হকের বড় ভাই মৃত. এমদাদুল হকের মালিকানা হওয়ায় তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এখানেও মিন্টু চোরাই ও ভেজাল তেলের রমরমা ব্যবসায় মেতে ওঠেন। এই পাম্পের শেয়ার পার্টনার ও ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে জালাল উদ্দিন। তিনিও মিন্টুর এহেন অনৈতিক ব্যবসায় ব্যাপরে আপত্তি তুললে মিন্টুর সাথে জানালের মনোমালিন্য হয়।
জানা যোয় সে সময় বিপিসি’র লাইেেসন্স ছাড়াই পেট্রোলের ব্যবসা চালাচ্ছিল প্রতারক মিন্টু। সে সময় এই পাম্পে ভেজাল তেল ও ওজনে কম দেওয়ায় বিভিন্ন যানবাহন মালিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন ইউএনও জাকিউল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযোন চালিয়ে মিন্টুকে দশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ভ্রাম্যমান আদালতের এই দন্ড পেয়ে মিন্টু জালালের উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এবার তিনি জালালকে তার ব্যবসার পার্টনারশীপ ও ম্যানেজারি থেকে ছাটাই করতে ষড়যন্ত্র আটতে থাকেন। তার এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ জালালের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের কাল্পনিক অভিযোগ এসে দূর্গাপুর থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগি জালাল জানান, প্রতারক মিন্টু সে সময় দূর্গাপুর থানা পুলিশকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। দীর্ঘ ৫ বছর মামলাটি চলার পর ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী মামলার রায় ঘোষনা করা হয়। এতে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হয় মামলা থেকে অব্যাহতি পান জালাল উদ্দিন।
এ প্রসঙ্গে জালাল উদ্দিনের এ্যাডভোকেট সুনির্মল সরকার জানান, আমার মক্কেল জালাল উদ্দিনকে একটি নাটকীয় ও সাজানো মামলায় দীর্ঘ ৫ বছর হয়রানী করা হয়েছে। এতে তিনি আর্থিক ও মানসিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তার এই ক্ষতি পূরন এবং মিথ্যা মামলা করা একটি আদালত অবমাননার শামিল। এসব কারণে প্রতারক মিজানুর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।
এসব কারণে তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে। ঘটনার শিকার ভুক্তভোগি জালাল উদ্দিন জানান, প্রতারক মিজানুর রহমান মিন্টু প্রতারনা করে আমার অর্থ সম্পদই আত্মসাত করেনি। সে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া প্রতারক মিন্টুর বিরুদ্ধে রাজশাহী নাটোর ও চিটাগাংয়ে চেক জালিয়াতির একাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান মিন্টুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারো টাকা আত্মসাত করেননি বলে দাবি করেন। এছাড়া অন্যকে ফাঁসনোর জন্য মিথ্যা ছিনতাই মামলা প্রসঙ্গে বলেন, আসামীরা তার সাথে আপোষ করায় তিনি আর মামলাটি চালাননি। তবে জালাল উদ্দিন আপোষ করার এই দাবিটি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছেন।
বাংলার কথা/মাহফুজুর রহমান প্রিন্স/ সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০

