নিউজ ডেস্ক :
কৃষিনির্ভর উত্তরের জেলা নীলফামারীতে সিংহভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে কৃষির ওপরে। এ জেলার উর্বর মাটিতে নানা রকম ফসল আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলোÑভুট্টা। এটি লাভজনক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। ধান, গম, সরিষা, পাট, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও হলুদ চাষ ছাড়াও ভুট্টা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, বদলে যাচ্ছে কৃষকের জীবন-জীবিকা। ভুট্টার দানা গো-খাদ্যসহ হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি মানুষেরও খাদ্য তালিকায় যোগ হয়েছে।
এক সময় জেলার ডিমলা ডালিয়া তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষ না খেয়ে দিন পার করত। এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না তাদের। তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা একাধিক চরে কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ডিমলায় দুই হাজার ৯৪৫ হেক্টর ও জলঢাকায় ৩২৮ হেক্টর চরবেষ্টিত জমি রয়েছে। চরগুলো হলোÑঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী, টেপাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই ও জলঢাকার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী ও শোলমারী ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৩টি চরে ভুট্টার চাষ হচ্ছে।
জেলায় গত বছর ২৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। এবার চলতি বছরের ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে, ২৫ হাজার ১০০ হেক্টর। এতে ভুট্টা চাষে প্রায় দুই হাজার ৫৫ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। এ বছর ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজারমেট্রিক টন।
সূত্র আরও জানায়, জেলা সদরে দুই হাজার ৮৯৬ হেক্টর, ডোমারে তিন হাজার ১২২ হেক্টর, ডিমলায় ১৩ হাজার ৪৫৮ হেক্টর, জলঢাকায় এক হাজার ৯৯৬ হেক্টর ও সৈয়দপুরে ৪০৪ হেক্টর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ। কৃষকরা রোপণ ও পরিচর্চার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। বোরো ধানের আবাদে (সেচ, সার, বীজ, পরিবহন, পরিচর্চা ও জ্বালানি) খরচ বেশি হওয়ায় ভুট্টার চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ঝড়সিংহেশ্বর গ্রামের কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, বোরো ধানের চাইতে কম খরচে ভুট্টায় লাভ বেশি। এ জন্য হামরা ভুট্টা চাষ করি। এক বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর বিঘায় ফলে ৩৫ থেকে ৪০ মণ। তিনি বলেন, এখন পাইনিয়ার ৫৪৯৫, সিনজেনটা, এসিআই, পেসিফিক, টাইটনিক ও ব্র্যাক জাতের ভুট্টা লাগানোর কাজ চলছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালোই হবে।
একই এলাকার আরেক কৃষক রোস্তম আলী বলেন, তিস্তার চরে একসময় বোরো ধান আবাদ করতাম, এখন ভুট্টা চাষ করতাছি। আমি তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগাইছি, এতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভুট্টায় লাভ বেশি, খরচ কম।
এদিকে জেলা শহরের উত্তর হাড়োয়া সরকার পাড়া মহল্লার কৃষক আহমেদ আলী জানান, ভুট্টাক্ষেতে বড় ধরনের রোগবালাই হয় না। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহালে বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মন ভুট্টার ফলন হয়। কিন্তু ধানতো এত ফলন হয় না। এবারে তিন বিঘা জমিতে পাইনিয়ার জাতে ভুটার চাষ করেছি। যার পরিচর্চার
কাজ চলছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, সদর উপজেলায় দুই হাজার ৮৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে দুই হাজার ১০০ হেক্টর। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে এক হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিঘাপ্রতি দুই কেজি ভুট্টা বীজ ও ত্রিশ কেজি করে সার দেয়া হচ্ছে। আশা করি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ ভুট্টা লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকের ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা (মাঠকর্মীরা) সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। ভুট্টা এখন শুধু গো-খাদ্যই নয়, মানুষের খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে।