নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ইউএনও শরিফ আহম্মেদ এবং এসিল্যান্ড মিথিলা দাসের লুটপাটের ঘটনার মামলায় ওসি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।মঙ্গলবার দুপুরে আমলী আদালত নাচোলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) হুমায়ন কবীর এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়েছে,বাদীর উচ্ছেদকৃত বাড়ির উক্ত জমি নিয়ে নাচোল সহকারী জজ আদালতে ২৯/২২ অ:প্র:ঘোষণামূলক ডিক্রীর দাবিতে মামলা দায়ের করেন।উক্ত মামলার কলামে বিবাদী জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এসিল্যান্ড অন্তভূক্ত আছে।মামলাটি বিচারাধীন। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে,১ ও ২নং অভিযুক্তদ্বয় সরকারি কর্মকর্তা (সি আর পি সি ১৯৭ধারা অনুসারে কোন সরকারী কর্মচারী তাহার দায়িত্ব পালন কালে অথবা দায়িত্ব পালনে আসীন বলিয়া বিবেচিত হওয়া কালে কোন অপরাধ সংগঠিত করিয়াছেন বলিয়া অভিযুক্ত হইয়া থাকেন,তখন সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত কোন আদালত সেই রূপ অপরাধ আমলে আনবেন না)।কিন্তু অত্র নালিশী দরখাস্ত অনুসারে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড সহ অন্যান্য অভিযুক্তকারীরা উক্ত তারিখে যে কার্য সম্পাদন করিয়াছেন বা তাদের দ্বারা যে কার্য সম্পাদন হইয়াছে তা সরকারি কাজের অংশ কিনা সেটা প্রমান সাপেক্ষ।আবার ৩-৫ ও নালিশী দরখাস্তের গর্ভে ২০/২২জন অজ্ঞাতনামা আসামীর কথা বলা হয়েছে,যাদের নাম ও ঠিকানা স্পষ্ট না।৩-৫অজ্ঞাতনামা আসামীরা কেন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বা তাদের পরিচয় কি,কেন তাদের সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল বা তারা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কিনা বা সরকারি দায়িত্ব পালনে কেন ইউএনও-এসিল্যান্ড অভিযুক্তদ্বয় তাদের সাথে নিয়েছিলেন তা তদন্ত ছাড়া সঠিক ভাবে নিরুপন করা সম্ভব না।
সিভিল আদালতে নালিশী জমি নিয়ে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আদালতের কোন আদেশ ছাড়াই কেন উচ্ছেদের প্রয়োজন হলো সেটাও আদালতের বোধগম্য নয়।এমতাবস্থায় প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাই আদালত নাচোল থানার ওসি কে সরেজমিন তদন্ত করে আগামি ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে,গত ১০ মে নাচোল উপজেলার কসবা উজিরপুর হাটে সরকারি জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নাচোল উপজেলা প্রশাসন। এসময় ৩০-৪০টি দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়। হাটের পাশেই দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে থাকা আরএস ১৬৬ নম্বর দাগে মামলার বাদী আব্দুর রশিদের বাড়িতেও অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। অথচ জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এমনকি আব্দুর রশিদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে বাড়ি থাকলেও ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নির্দেশে দুটি পাঁকা ঘর ভেঙে ফেলা হয়। অনেক কাকুতি-মিনতি করেও কোন সুযোগ দেয়নি তারা বাড়ি ভাঙার সময় ইউএনও ও এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে ২০-২২ জন লোক আব্দুর রশিদের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় ঘরে ঢুকে মামলার আসামী দুরুল, নুরুল ও জেন্টু বাক্সে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এমনকি ঘরের খাট, সোফাসেট, কাঁসার থালি লুট করে নিয়ে যায় তারা। আব্দুর রশিদেরর দাবি, লুটপাট করা লোকজন ইউএনও ও এসিল্যান্ডের বাহিনী। এই কাজে তাদের পুরোপুরি সমর্থন ছিল। দুটি ঘরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও আরও অন্তত ৬৩ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট করেছে। ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নির্দেশনায় ও উপস্থিতি এমন কাজ করা হয়েছে। তাই বিচার পেতে আব্দুর রশিদ গত বৃহস্পতিবার আদালতে নাচোল ইউএনও শরিফ আহম্মেদ ও এসিল্যান্ড মিথিলা দাস কসবা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলী লতিবের ছেলে মো. দুরুল, মো. নুরুল ও একই এলাকার মৃত হেলালের ছেলে মো. জেন্টু সহ তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।যাহার মামলা নং-সি আর ৮৬/২২ নাচোল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুর রহমান (২) জানান,বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে আদালত মামলাটি গ্রহণ করেন। গত রোববার আদেশের দিন ধার্য থাকলে মাননীয় আদালত মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ন কবীর মামলাটি তদন্তের জন্য নাচোল থানার ওসি কে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলার কথা/জোহরুল ইসলাম জোহির/২৪ মে/২০২২
Leave a Reply