মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর (রাজশাহী) o
রাজশাহীর দুর্গাপুরে ফসলী জমিতে পুকুর খননের অভিযোগে পুকুর মালিকের ৭দিনের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে অবৈধ পুকুর খননের অপরাধে উপজেলার গোপালপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুকুর মালিক আকবর আলীকে ৭ দিনে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারি কমিশনার (ভূমি) শুভ দেবনাথ এই রায় প্রদান করেন।
আকবর আলীর বাড়ি উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে। ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আকবরকে ৭ দিনের এই কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
দুর্গাপুর উপজেলায় ফসলী জমিতে পুকুর খনন বন্ধে অভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলায় লাগামহীন হয়ে উঠেছিলো পুকুর খনন কারী চক্র। বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট তৈরি করে নিরীহ কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কৃষি জমি লিজ নিতো কেউ জমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে কৌশলে তাদের জমি মাঝখানে ফেলে কৃষকদের বেকায়দায় ফেলতেন নিরুপায় হয়ে জমি দিতে হতো। ফলে আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে এই এলাকার ফসলী জমি যার ফলে জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
আর ভেকু দালাল চক্র দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এস্কোভেটর (ভেকু) মেশিন এনে বিভিন্ন এলাকায় দিনে রাতে পুকুর খনন কার্যক্রম চালাতো। জমির টপ সয়েল বিক্রি করা হতো এলাকার বিভিন্ন ইট ভাটায়। মাটি পরিবহনে ফলে এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে কাঁদায় পিচ্ছিল হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
উল্লেখ্য কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে উল্লেখ রয়েছে,বাংলাদেশের যে সকল কৃষি জমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোন ভাবেই তাহার ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কোন বিশেষ ক্ষেত্রে এবং উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধি মোতাবেক অত্র বিধানাবলী পরিবর্তন করা যাইবে।
আবার তিন ফসলী জমি রক্ষায় উচ্চ আদালতের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ক্রমেই বেপরোয়া পুকুর খননকারী চক্র প্রশাসনকে বুড়ো অঙ্গুলি দেখিয়ে চালাতে থাকে তাদের অবৈধ পুকুর খনন। এবার তাদের লাগাম টানতে প্রশাসনের একশান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) শুভ দেবনাথ এর নেতৃত্বে গত দুই দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা অঙ্গার বীল,পারিলা, দাওকান্দী, গোপালপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয় ; এসময় বেশকিছু ভেকু মেশিন নিষ্ক্রিয় করা হয়। একজনকে ৭ দিনের জেল দেওয়া হয়।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) শুভ দেবনাথ জানান, গত দুইদিন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে, গোপালপুরের মৃধা পাড়ায় কারেন্টের পোল ঘেঁষে পুকুর খনন চলছিল ফলে কারেন্টের পোল ভেঙে গোটা এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাদের একাধিকবার নিষেধ করে চিঠি দেওয়া হলেও তা তোয়াক্কা না করে পুকুর খনন চালিয়ে যায়। ফলে সরকারি সম্পদ রক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য অভিযান পরিচালনা করে আকবর আলী নামের এক ব্যক্তিকে সাত দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধা জানান, অন্যের জমি জোর করে পুকুর খনন, খাস জমিতে পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।
অভিযানের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে ; একই সাথে অব্যাহত থাক এমন অভিযান এটাই প্রত্যশা সকলের।
বাংলার কথা/জানুয়ারি ২৭, ২০২১