বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি o
দরজা বন্ধ কক্ষে অফিস করেন তিনি; করেন রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার। এ ছাড়াও তার আছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা। হাসপাতালের রোগীদের বাধ্য করা হয় তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে। হাসপাতালের আবাসিক ভবনের অনেক কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন জণগণের কাছে। এমন অভিযোগ রাজশাহীর বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে নিজেকে ক্ষমতাধর মনে করে এই অনিয়ম করছেন তিনি।
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে চিকিৎসার জন্য অপারেশান থেকে শুরু করে সব ধরণের যন্ত্রপাতি আছে। তারপরেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার বেশির ভাগ করাতে হয় বাইরে থেকে। কারণ বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক ব্যবসা রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পানা কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামানের। এ কারণে রোগী এলেই নানা রকম পরীক্ষা লিখে দেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে সকল আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে তার অধিকাংশই সাধারণ জনগণকে ভাড়া দেওয়া। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সম্পত্তি লিজের হিসেব রাখেন ডা. আকতারুজ্জামান ও তার আস্থাভাজন বড় বাবু। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামিমা আক্তার ডলি নামের ওই বড়বাবু একজন স্বাস্থ্য সহকারী।
বাঘা শাহ্দৌল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তানজিম হাসান অভিযোগ করে বলেন, গত চারদিন পূর্বে কলেজে ভর্তির জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ সত্যায়িত করতে যাই ডা. আকতারুজ্জামানের অফিসে। এ সময় তার রুমে প্রবেশ করার প্রধান দরজায় তালাবদ্ধ ছিল। পরে পাশের ঘর বড় বাবুর রুম হয়ে আরো দুইটি দরজা অতিক্রম করে দেখি, তিনি দুজন নারীর সাথে গল্প করছেন। তখন তার কাছে সার্টিফিকেট সত্যায়িত করার কথা বলতে তিনি বিরক্তির সাথে নিচ তলায় ১০৪ নম্বর রুমে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর ওই ডাক্তার আমার আব্বুর জাতীয় পরিচয় পত্রের মূল কপি দেখতে চান। পরে মূলকপি নিয়ে গিয়ে দেখি তিনি অফিসে নেই।
বাঘার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, দুইটি পৌরসভা এবং সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বাঘা উপজেলা। এখানে প্রায় দুই লক্ষ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শুরুতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা হিসাবে গড়ে উঠলেও পরে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর এখানে অপারেশন থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিক্ষার জন্য আনা হয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। তবে নানা কারণে এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন স্বাস্থ্য সহকারী জানান, ডা. আকতারুজ্জামান এর রুমে প্রধান দরজায় তালা মেরে রাখাকে কেন্দ্র করে পাশের রুমে বর্তমানে যিনি (হিসাব রক্ষক) বড় বাবুর দায়িত্ব পালন করছেন তাকে নিয়ে নানা বাজে কথা শুনতে পাচ্ছি। এতে করে আমাদের এবং প্রতিষ্ঠানের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। তাদের মতে, এখানে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হলেও প্রভাব খাটিয়ে তারা অন্যত্র বদলি করে দেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, এখানে কাগজে কলমে ১৯ জন ডাক্তার থাকার কথা। কিন্তু আছে ১১ জন। এদের মধ্যে অনেককেই ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে রুগী দেখতে হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন পদে লোকবল সংকট রয়েছে। এ কারণে ইচ্ছে থাকার পরেও আমরা রোগীদের ঠিকমত সেবা দিতে পারছি না। এসব পদে লোকবল চেয়ে তিনি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
বাংলার কথা/নুরুজ্জামান/ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

