নিজস্ব প্রতিনিধি :
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল (সম্মেলন) আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সম্মেলন ঘিরে পদ প্রত্যাশীরা বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে। তৃণমুলের ভাষ্য এবার সম্মেলনের মুলপ্রতিপাদ্য হচ্ছে আর্দশিক ও সদর ভিত্তিক নেতৃত্ব নির্ধারণ করা। তৃণমুল বলছে, এবারের সম্মেলন আদর্শিক ও আদর্শহীন নেতৃত্বের লড়াই। আদর্শিক নেতৃত্বের পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না । অন্যদিকে আদর্শহীন নেতৃত্বের পক্ষে রয়েছেন উপজেলা সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলে আলোচনা রয়েছে।
অনেক বড় নেতা জন্ম থেকে আওয়ামী লীগ,কিন্ত নির্বাচন এলেই নৌকাবিরোধী অবস্থান ও তৎপরতা এমন বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমান নেতৃত্ব চাই না তৃণমুল, তারা চাই আর্দশিক নেতৃত্ব যে নেতৃত্ব কখানো নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিবে না। তানোরে যোগ্য নেতৃত্ব থাকার পরেও আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে সদর ভিত্তিক কোনো আর্দশিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে পশ্চিম এবং পুর্বপাড়ার বিশ্বাসঘাতক-বেঈমান, বগী ও নরসুন্দর নির্ভর নেতৃত্বের কারণে বিপুল সম্ভবনা থাকার পরেও কখানোই সদরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার করতে পারেনি দলটি। তানোর সদরে দলের আদর্শিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার মতো নেতৃত্ব থাকলেও নানা ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশল করে সদর ভিত্তিক নেতৃত্ব বঞ্চিত করা হয়েছে। আসন্ন সম্মেলনে নেতাকর্মীরা সদরে তাদের নেতা নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর । তবে অনেকে দলে শুদ্ধি অভিযানের পর কাউন্সিল করার দাবি করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আদর্শিক নেতৃত্ব লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার কোনো বিকল্প নাই। কারণ সিলেকশন বা ইলেকশন যাই হোক ময়নার সভাপতি হওয়া প্রায় নিশ্চিত এনিয়ে কারো কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। ফলে সস্মেলনের মুল আলোচনা হচ্ছে সম্পাদক পদে আসছেন কে সেটা নিয়ে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন আলোচনায় রয়েছে এরা হলেন তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার, আবুল বাসার সুজন ও বাধাঁইড় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান প্রমুখ।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্পাদক পদে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদিপ সরকার পচ্ছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছে, নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা নিয়ে কখানো কখানো মতবিরোধ দেখা দিলেও, প্রদিপ সরকার তার রাজনৈতিক জীবনে কখানো কোনো পরিস্থিতেই নৌকার বিরোধীতা করেননি। আদর্শিক নেতৃত্ব হিসেবে তিনি সব সময় মুল ধারার সঙ্গে রয়েছেন।
জানা গেছে, সম্মেলনে এবার নেতৃত্ব নির্বাচনে আদর্শিকতা ও নীতিনৈতিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন আলোচনাতেই নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার রাজনৈতিক দুরদর্শীতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, নির্বাচনী কৌশল, গ্রহণযোগ্যতা ও আদর্শ ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নাই। অন্যদিকে প্রদিপ সরকারকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। কিন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার পরিবারের অবদানের কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই। আবার তার আদর্শিকতা, নেতৃত্বগুন, রাজনৈতিক দুরদর্শীতা, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার কৌশল ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নাই। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে একজন আদর্শিক নেতার যে ধরণের যোগ্যতার প্রয়োজন তার সবগুলো ময়না ও প্রদিপের মধ্য বিদ্যমান রয়েছে। কিন্ত পশ্চিম ও পুর্বপাড়ার বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান ও নরসুন্দর নির্ভর নেতৃত্বের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রদিপ কখানোই তার প্রতিভা মেলে ধরতে বা বিকাশ ঘটাতে পারেনি, তবে এবার সেই সম্ভবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে তৃণমুল। ফলে বির্তকিত নেতৃত্ব সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুনের কপাল পুড়ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। অপরদিকে সম্পাদক পদে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবুল বাসার সুজনকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, নবীণ,তরুণ ও মেধাবী নেতৃত্ব হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকের মতো পদে নেতৃত্ব দিতে যেমন পারিবারিক ঐতিহ্য, আর্থিক সচ্ছলতা, পেশী শক্তি, কর্মীবাহিনী ইত্যাদি প্রয়োজন তার সবগুলো সুজনের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও প্রদিপ সরকার ও সুজন পৌর সদরের বাসিন্দা হওয়ায় মুল প্রতিদন্দিতা তাদের মধ্যেই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া বাধাঁইড় ইউপি আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে নিয়েও সম্পাদক পদে আলোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সাল থেকে সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সরাসরি এমপিবিরোধীতার নামে সব ধরণের সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে, এতে নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে, তারা তাদের নেতৃত্ব কোনো ভাবেই মানবেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্ত করোনা ও রমজানসহ নানা কারণে একাধিকবার সম্মেলন স্থগিত করা হয়। এদিকে আগামি ১৬ জুন হচ্ছে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এই খবরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তৃণমুলের ভাষ্য, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদর্শিক ও তরুণ নেতৃত্ব দিতে হবে, আর সেই ক্ষেত্র এগিয়ে রয়েছেন ময়না ও প্রদিপ সরকার। তৃণমুলের অভিযোগ উপজেলা কমিটির সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন একটানা প্রায় একযুগ দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাদের বেঈমানির কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড কখানোই জোরদার হয়নি।এমনকি স্থানীয় সাংসদকে ফেরেস্তার সঙ্গে তুলনা করে সভাপতি ও সম্পাদক একে অপরকে বেঈমান-মিরজাফর ও বিশ্বাসঘাতক, দুর্নীতিবাজ, চশমখোর অ্যাঙ্খায়িত করে দু’জনেই তাদের অনুসারী নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়ায় দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। আবার রাতারাতি তারা এখন এক হয়ে এমপির বিরুদ্ধে বিষোদাগার করছে,এতে প্রশ্ন উঠেছে আসলে তারা কার রাজনীতি করছে।
আবার উপজেলা নির্বাচনে দুই বার গোলাম রাব্বানীকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়, আর সম্পাদক মামুন দুই বারই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে রাব্বানীর পরাজয় ঘটায়। অন্যদিকে তানোর পৌরসভা নির্বাচনে দুইবার প্রদিপ সরকারকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে দুই বারই রাব্বানী-মামুনের ইশারায় ইমরুল হক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে প্রদিপ সরকারের পরাজয় ঘটায়। এছাড়াও জাতীয় সংসদ, জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এরা প্রকাশ্যে সরাসরি নৌকার বিপক্ষে ভোট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আবার সম্মেলনের কথা শোনে রাব্বানী মামুন একট্রা হয়ে এমপিকে দোষারোপ করছে। রাজনৈতিকভাবে কতোটা দেউলিয়া ও নির্লজ্জ হলে এমন হয় এরা তার বাস্তব উদাহারণ বলে মনে করছে তৃণমুল। এখন প্রশ্ন হলো নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা নিয়ে মতবিরোধ ও দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা কি একই বিষয়-? যদি সেটা না হয় তাহলে যারা দল, নেতা ও নেতৃত্বের সঙ্গে বেঈমানী করে নৌকার পরাজয় ঘটায় তারা কোন আওয়ামী লীগ এদের কি নৈতিকভাবে আওয়ামী লীগে থাকার অধিকার রয়েছে। এসব বিবেচনায় এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আদর্শিক ও তরুণ নেতৃত্ব দেয়া সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, আওয়ামী লীগে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই, দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনি বলেন, দল যদি তাকে কোনো দায়িত্ব দেয়, তাহলে তিনি যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
এবিষয়ে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার বলেন, তারা এসব নিয়ে ভাবছেন না, তারা ভাবছেন আগামিতে সবাই মিলেমিশে কিভাবে একটি ভাল সম্মেলন করা যায়। এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরিফ খাঁন বলেন, যারা নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে এবং যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করেছে তারা দলের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক অটো বহিস্কার, নেতৃত্ব তো পরের কথা সাংগঠনিক পদে তাদের প্রার্থী হবার যোগ্যতা নাই।
এবিষয়ে আবুল বাসার সুজন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর তিনি একজন কর্মী। তিনি বলেন, দল যদি তাকে কোনো দায়িত্ব দেন তাহলে সেই দায়িত্ব পালনে তিনি প্রস্তুত, তবে তিনি তাদের বাইরে নয়, তাদের সিদ্ধান্তই তার সিদ্ধান্ত।
বাংলার কথা/২০ মে/২০২২
Leave a Reply