নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশার মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। বাদশার বক্তব্যকে কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে উস্কানিমূলক বক্তব্য বলেও মন্তব্য করা হয় এতে। এছাড়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুকে করে তৈরি হওয়া উদ্ভুত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাজশাহীর একজন জনপ্রতিনিধি (সরাসরি না প্রকাশ না করে, সাংসদ বাদশাকে ইঙ্গিত) শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে হত্যা করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, এবং শাহরিয়ারের পরিবারকে হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ হাসপাতালে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে অমূলক তথ্য প্রদান করেছেন। তিনি অনাকাঙ্খিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে জনপ্রতিনিধির বাস্তবজ্ঞানহীন ও উষ্কানিমূলক বক্তব্য কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়। দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ও সামগ্রিকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং রাজশাহী শহরে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে- এমন বক্তব্য কোনো দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে আশা করা যায় না। তার বক্তব্য পরিস্থিতি শান্ত করার চেয়ে তা আরো জটিল করেছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে এবং ঘটনার খন্ডিত অংশকে ব্যবহার করে তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষানগরী রাজশাহী এবং সমগ্র দেশ তথা মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে বিব্রত করেছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তপ্ত না করে তিনি পরিস্থিতি উত্তরণে ভূমিকা রাখতে পারতেন, এমন কোনো উদ্যোগ তার পক্ষ থেকে লক্ষ্য করা যায়নি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘তার বক্তব্য অনুসারে শাহরিয়ার যদি পূর্বেই মারা গিয়ে থাকে তবে তার লাশ জরুরি বিভাগ থেকে লাশঘরে না রেখে চিকিৎসার জন্য ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হলো কেন? তার শরীরে কেন স্যালাইন পুশ করার ও অক্সিজেন দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো? শাহরিয়ারের লাশ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পরিবারের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। মৃতের বড় ভাই কোনো ধরণের অভিযোগ বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রহণ করে। ডাক্তাররা যদি এতটাই নিশ্চিত থাকেন যে, শাহরিয়ারকে পূর্বেই হত্যা করা হয়েছে তবে হত্যা ও আগের রাতে ঘটনার কথা বিবেচনা করে কেন বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করলেন? লাশ হস্তান্তরের দায়দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে রাকসুর সাবেক ভিপি ও সাংসদ বাদশা হেয় করেছেন উল্লেখ করে বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের ধারক এবং এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একক মালিক হিসেবে দাবি করে রাজশাহীর সেই জনপ্রতিনিধি শুধু নিজেকেই হেয় করেননি বরং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতায় বিশ্বাস করেন এমন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদের সবাইকে মর্মাহত ও অপমাণিত করেছেন। যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও দেশের ক্রান্তিকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের গৌরবময় অতীতের বিষয়টি তিনি একেবারেই ভুলেই গেছেন। এমনকি জোহা স্যার ও স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের রক্তস্নাত মতিহার ক্যাম্পাসকে তিনি হেয় প্রতিপন্ন করেছেন।’
এদিকে, শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও উভয়পক্ষের মামলার বিষয়েও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় রামেকে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রামেকে নেওয়ার ৩৫ মিনিট পর বিনা চিকিৎসায় আহত শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে মেডিকেলে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দেলন করলে সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন। পরে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধনে বক্তব্যকালে সাংসদ বাদশা রাবি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেন।