নিউজ ডেস্ক :
তোশাখানা মামলার জেরে পাকিস্তানের বর্তমান বিরোধী নেতা ইমরান খানকে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করতে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তা আটকে দিয়েছেন লাহোর হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার লাহোরের উচ্চ আদালত বলেন, ‘পিটিআই চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে অপসারণ করতে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ৬৩ নম্বর ধারা অনুসরণ করছে বলে দাবি করেছে, কিন্তু এই দাবি সঠিক নয়। কমিশন আদৌ কোনো সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে কিনা— তা ও স্পষ্ট নয়।’
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে একটি নোটিশও জারি করেছেন লাহোর হাইকোর্ট। আদালতের বিচারক জাওয়াদ হাসান স্বাক্ষরিত সেই নোটিশে কমিশনকে আগামী ১১ জানুয়ারির মধ্যে পিটিআই চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইমরানের অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্ট জনদের দেওয়া উপহার জমা রাখে।
তোশাখানার নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা বা সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেওয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।
গত অগাস্টে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) সদস্য মোহসনি নওয়াজ রানঝা ইমরানের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় তোষাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেওয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি।
মামলার তদন্ত শেষে গত ২১ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের একটি বেঞ্চ জানায়, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এ কারণে পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি আর পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবেন না এবং আগামী ৫ বছর জাতীয় বা প্রাদেশিক— কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশন এই রায় ঘোষণার পর তার বিরুদ্ধে লাহোর হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করে পিটিআই। বৃহস্পতিবার তার রায় ঘোষণা করলেন আদালত।